সেফটি রেজার, (Safety razor)কি কোনো কিভাবে আবিষ্কার হলো।

 সেফটি রেজার


নাম তার জিলেট। বাে্ন শহরে বাস করতেন ভদ্রলােক। ব্যবসার মাধ্যমে অর্থবান হতে চাইলেন কিন্তু কি ব্যবসা করবেন। যেমন তেমন ব্যবসা জিলেটের পছন্দ নয়। ভাবলেন, এমন নতুন কিছু একটা তৈরি করবেন, যার কোন প্রতিযােগী থাকবে না এবং সব জায়গায় বাজার পাবেন। কিন্তু কী তৈরি করবেন তিনি?



অনেক ভাবনাচিত্তার পর দাড়ি কামানাের ক্ষুরের দিকে নজর পড়লাে তাঁর। ই্যা, তাইতাে! দাড়ি কামানাের ঝামেলা অনেক। সবাই নিজ হাতে নিজের দাড়ি কামাতে পারে না, নাপিতের তােষামােদ করতে হয়, নয়ত হাতের কাজ ফেলে সেলুনে ধ্ণা দিতে হয়। নিরাপদ কোন ক্ষুর তৈরি করা যায় নাকি? যা সবাই 1. ব্যবহার করতে পারবে, আনাড়ি হাতেও দাড়ি কেটে ফ্যালা ফ্যালা হয়ে যাবে না এবং দাড়ি কামানােতে ক্ষুরের চেয়ে আরাম বােধ হবে! আর এমন একটা সরঞ্জাম আবিষ্কার করতে পারলে নির্ঘাৎ দু-পয়সার মুখ দেখা যাবে। খুব করে অবলেন জিলেট সাহেব। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। শেষে খাড়া করলেন তেমন ক্ষুরের একটা মডেল।


জিলেট সাহেব কিন্তু প্রযুক্তিবিদ ছিলেন না। তাই মডেল একটা তৈরি করলেও পারলেন না মডেলটাকে বাস্তবে রূপ দিতে। তাহলে কী করা যাবে? জিলেট সাহেবের মনে হলাে, যােগ্য একজন কারিগর যদি পাওয়া যায় তাহলে ব্যাপারটার সুরাহা হতে পারে। জিলেট সাহেব এবার মনে মনে খোঁজ করতে শুরু করলেন এক যােগ্য প্রযুক্তিবিদকে।


ঠিক সেই সময় বােপ্টন শহরে এক বিজ্ঞান সম্মেলনের আহ্বান জানানাে হলাে। সম্মেলনে যােগদান করতে আমন্ত্রণ জানানাে হলাে বহু বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদকে। নতুন কোনকিছুর মডেল এবং বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা প্রদর্শনেরও


সুযােগ দেওয়া হলাে। জিলেট সাহেব সুযােগটা হাতছাড়া করলেন না। হাজির হলেন বিজ্ঞান সভায় এবং প্রদর্শন করলেন তার মডেলটি, কিন্তু মডেলটির প্রতি তেমন উৎসাহ দেখা গেলনা কারও।


সম্মেলনে যােগদান করেছিলেন এক তরুণ প্রযুক্তিবিদ। নাম তার নিকারসন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। জিলেটের মত তিনিও স্বপ্ন দেখতেন হাতে নাতে কিছু করার জন্য এবং একচেটিয়া ব্যবসার দিকে ছিল ভয়ানক আগ্রহ। জিলেট প্রদর্শিত মডেলটির প্রতি একমাত্র তিনিই আকর্ষণ বােধ করলেন। সভার কাজ শেষ হলাে। জিলেট সাহেব ভগ্নোৎসাহে বেরিয়ে এলেন হল থেকে। আর তখনই তাঁর পাশে এসে দাঁড়ালেন নিকারসন। বললেন, "আপনার মডেলটি আমার খুবই পছন্দ। আপনার অসুবিধার কথাও জেনেছি আপনার বক্তব্য থেকে। আমি এই মডেলটি বাস্তবে রূপ দিতে চেষ্টা করবাে যদি আপনি আসার উপর আস্থা রাখেন।" প্রস্তাবটি জিলেট সাহেবকে খুবই খুশি করলো। জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কী বিজ্ঞানী?” নিকারসন বললেন- “না, একজন প্রযুক্তিবিদ- মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়র ।"


জিলেট সাহেব আরও খুশি হলেন এবং অম্লান বদনে মডেলটি তুলে দিলেন নিকারসনের হাতে। নিকারসন মডেল অনুযায়ী নতুন যন্ত্র বানাতে মন প্রাণ উজাড় করে দিলেন। তৈরি করতে গিয়ে এক আধটু অসুবিধারও সম্মুখীন হলেন এবং জিলেটের সঙ্গে আলােচনা করে সমস্যাগুলাের সমাধানও করলেন। তারপর একদিন সত্য সত্যই বানিয়ে ফেললেন মডেল অনুযায়ী যন্ত্র এবং তীক্ষ্ম ধার ব্লেড। ঝকঝকে সুন্দর যন্ত্র এবং ব্লেড দেখে খুব খুশি হলেন জিলেট। দাড়ি কামাতে গিয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যও অনুভব করলেন।


১৮৯৫ খ্রীষ্টাব্দে উভয়ে ব্যবসায় নেমে পড়লেন। ব্যবসা করতে গিয়ে বেশ অসুবিধায় পড়লেন তাঁরা। ট্যাক থেকে পয়সা খরচ করে যন্ত্র বানালেন, কিন্তু ক্রেতা বড় একটা পাওয়া গেল না। পুরাতন ক্ষুরকে ছেড়ে সহসা সেফটি রেজার কিনতে এলেন না কেউ। তখন তাঁরা ভাবলেন, যদি কিছু সংখ্যক যন্ত্ জনসাধারণের মধ্যে বিলি করা যায়, তাহলে সবাই এর সুবিধেটুকু বুঝতে পারবে এবং তাদের দেখাদেখি অনেক লােক উৎসাহী হয়ে কিনতে এগিয়ে আসবে। আর হু হু করে বিক্রি হবে।


তাই-ই হলাে। বেশ কিছু সেটিরেজার তৈরি করে বিলিয়ে দেওয়া হলাে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলাে ন। দীর্ঘকালের ক্ষুরের অভ্যাস পরিত্যাগ করলাে না কেউ। মাথায় হাত দিলেন দুজনে। ট্যাকের পয়সা শেষ; ব্যবসাও ভরাডুবি।

দুজনে যখন চোখে সরষের ফুল দেখছিলেন, তখনই এক মস্তবড় ব্যবসায়ী লাভের গন্ধ পেয়ে এগিয়ে এলেন। অঢেল টাকা খরচ করে সেফটি রেজার তৈরির একটা বড় কারখানা খুলে দিলেন এবং অংশীদাররূপে গ্রহণ করলেন জিলেট সাহেব ও নিকারসনকে।


কথিত আছে, ১৯০৩ খ্রীষ্টাব্দে ব্যবসায়ী ভদ্রলােকটি কারখানাটি চালু করেন। এবং প্রথম তৈরি করেছিলেন মাত্র ৫০ টি রেজার এবং ১৫৩ টি ব্লেড। এই কয়েকটিকে বিক্রি করতে তাঁদের এক বছর সময় লেগেছিল। ব্যবসায়ীটি কিন্তু হাল ছাড়লেন না। একই সঙ্গে প্রচার ও বিক্রি দুইই চালিয়ে যেতে লাগলেন। চার বছর পরে লাভের মুখ দেখলেন সবাই। ব্যবসা একেবারে তুঙ্গে উঠলাে। সে বছর এক লক্ষ রেজার এবং দেড় লক্ষ ব্লেড বিক্রি হয়ে গেল। চাহিদা উত্তরােত্তর বেড়েই চললাে।


১৯১০ খ্রীষ্টাব্দের দিকে সেফটি রেজার এবং ব্লেডের চাহিদা এত বেড়ে উঠলাে যে, একটি মাত্র ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে যােগান দেওয়া সম্ভব হলােনা। ততদিনে নানা দেশ থেকে এসে গেল প্রচুর চাহিদা। তাই অন্যান্য দেশও শুরু করলাে সেফটি রেজার উৎপাদন। আর সেই থেকে আবিষ্কারক হিসেবে জিলেট সাহেবের নামও সাধারণের মুখে মুখে ফিরতে লাগলো। এখনও জিলেট সেফটি রেঞ্জার এবং ব্লেড পাওয়া যায়।

Post a Comment

Previous Post Next Post