জিপসাম সিমেন্ট(Gypsum cement)

 জিপসাম সিমেন্ট


হাত পায়ের হাড় ভেঙ্গে গেলে ডাক্তার প্লাস্টারের ব্যবস্থা করেন। এক ধরনের সাদা সাদা গুঁড়ােকে পানি দিয়ে মেখে চাপিয়ে দেওয়া হয় ভাঙ্গা জায়গায় উপরে। কিছুক্ষণের ভেতরে সেটি শক্ত হয়ে পাথর ওঠে যেন। ঐ সাদা সাদা গুঁড়াে জিপসাম নামক এক ধরনের পাথর থেকে তৈরি করা হয়। ধবধবে সাদা খনিজ পাথর জিপসাম। ওর রাসায়নিক গঠন ক্যালসিয়াম সালফেট এবং দুটি অণু পানি (Caso.40 2H,O)। ১২০° সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় পুড়িয়ে ফেললে শতকরা ১৫ ভাগ জল বাষ্পীভূত হয়ে যায়। পরিণত হয় সাদা সাদা গুঁড়ােয়। এখন ওর গঠন হয় (Cas04)a.H20। সাদা গুঁড়াটাকে বলা হয় প্লাষ্টার অব প্যারিস। এই গুঁড়ােটির প্রধান গুণ, সাধারণ তাপমাত্রায় সহজে পানিকে শােষণ করে সিমেন্টের মত শক্ত জিপসামে পরিণত হয়। তাই ঢালাই-র কাজে, ভাষর্যে, হাত পা ভাঙ্গলে প্লাস্টার করতে, কখনও কখনও ঘরের মেঝেকে সুন্দর করতে কেউ কেউ এটা ব্যবহার করেন।



জিমপকে অতি প্রাচীনকালে থেকে মানুষ ব্যবহার করে আসছে। সাদা চকখড়ির মত দেখতে বলে এটির নামকরণ করা হয়েছিল জিপসাম। শব্দটি গ্রীক শব্দ 'জিপসাম থেকে নেওয়া। নামকরণ করেছিলেন প্রখ্যাত গ্রীকবিজ্ঞানী থিওফ্রেটাস। থিওফ্রেটাসের বহু আগে থেকেই জিপসাম ব্যবহার হয়ে আসছে। মনে হয়, ওটিকে সর্বপ্রথম প্লাস্টারের কাজে ব্যবহার করেছিল প্রাচীন মিশর। কে যে এর বৈশিষ্ট্যটুকু প্রথম লক্ষ্য করেছিলেন- তা জানা যায়না।


জিপসামকে তারা যে কী বলতাে, তাও বলার উপায় নেই। কেবল একে পুড়িয়ে ফেললে যে সাদা গুড়ােয় পরিণত হয় এবং সেই গুড়ােকে পানি মাখিয়ে ইট বা পাথর গাথলে শক্ত হয়ে বসে যায়-এই সত্যটি আবিষ্কার করেছিল। পানি দিয়ে কেবল গুড়াে দিয়ে গাঁথলেও শক্ত হয়ে যায়। কেন না ঐ গুঁড়াে পানিকে আকর্ষণ করেও জমাট বাঁধতে পারে । গুণটি নিশয়র অধিকার বলেই সেকালে তারা এমন উ উ পিরানি গড়তে পারতো। সে পিছ আজকের দিনেও আমাদের কাছে অন্যতম এক আশুপে পরিণত ৮ গাধুনি এমন মজবুত যে আজ প্রায় চারহাজার বছর ধরে অক্ষত স। ভবিষাতেও বহুকাল থাকবে।


প্রকৃতিতে তিন ধরনের জিপসাম পাওয়া যায়। সঙ্গেইট, ম্যঃ সাটিনম্পার। সেলেনাইট স্বস্থ পাথর এবং মূল্যবান। সাটিন্পার অশুক্ত ক আলাস্টার অস্বচ্ছ সাদা পাথর। গাথুনির কাজে ঐ অ্যাপারাই ব্যহ হয়। মিশরীয়রাও ব্যবহার করতাে অ্যালাবাস্টারকে। পিরানিতে ফ্যারাওদের মমির পাশে অ্যালাস্টারের তৈরি বহু বােল পাওয়া গেছে। সেকালে ওর যে যথেষ্ট মূল্য ছিল তার প্রমাণ এটি। নিলয়ট সাধারণ জিনিস ব্যবহার করতেন না কিনা!


গ্রীক রোমান আমলে জিপসামের যথেষ্ট চাহিদা ছিল। বিশেষ করে রােমানরা বিলালী ও সৌন্দর্ব্যপ্রিয় হওয়ার বড় বড় অট্টালিকা গড়েছিল। গাপুনি উপাদান এত জিপসাম লাভ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাই হিপনে ছাড়াও অন্য উপায় আবিষ্কার করেছিল। আগ্নেয়গিরির সঙ্গে চুন নিশিয়ে তৈরি করতে গাঁধুনির মশলা। ব্যবস্থাটায পাথরের সিনেন্টের মতই ছিল; হৃৎ সিমেন্টের যেন গােড়াপত্তন করেছিল রােমানেরা। জিপনানের গঁড্াে ব্যয়বহল বলে পরের দিকে সস্তায় পাঁধুনির মশলা উৎপাদন করতে অনেকে সচেষ্ট হয়ে ওঠেন। অনেক ব্যবস্থা অবশ্য গড়ে উঠেছিল। প্রকৃত সিমেন্টের মত পদার্থ প্রথম তৈরি করেন জোসেফ অ্যাসপজিন নামে ইংলন্ডের জনৈক রাজমিস্ত্রী। ১৮২৪ খ্রীষ্টাব্দে তিনি চূনের সঙ্গে মাটির গুঁড়াে মিশিয়ে মিশ্রণটিকে ভালভাবে পুড়িয়ে ফেলেন। পােড়ানাের ফলে উৎপন্ন হয়েছিল এক ধরনের রে। ঐ গুঁড়োর সঙ্গে পানি মেশাতে গিয়ে দেখা গেল, পাের্টল্যান্ড দ্বীপের এক ধরনের কঠিন পাথরের মত শক্ত হয়ে উঠেছে। তখনই নামকরণ করা হয়েছিল পাের্টল্যান্ড সিমেন্ট। এই ধরনের নামকরণের মূলে রয়েছে, সে আমলের বিশেষ ব্যবস্থা। ইংলন্ডে দালান তৈরির জন্য বয়ে আনা হতাে পাের্টল্যান্ড দ্বীপ থেকে শক্ত পাথর। জোসেফ অ্যাপভিনের তৈরি গাঁথুনির মশলা অনুরূপই হয়েছিল।


বর্তমানে পদ্ধতিটির আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। একভাগ পরিষ্কার কানা মাটি এবং তিনভাগ চুনাপাথরকে নিয়ে উত্তমরূপে গুঁড়াে করা হয়। সেই গঁড়ােকে এবার পানিতে সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা হয় সেই-র মত জিনিস। তারপর একটা বিশেষ ধরণের ঘূর্ণায়মান ফুচীতে ১৪০০° সেন্টিগ্রেডে উত্তপ্ত করা হয়। প্রচন্ড ভাগে মিশ্রণটি গলে যায় এবং কাঁকরে পরিণত হয়। কাঁকরগুলাে ঠান্ডা হলে উইড়া করা হয়। ঐ গুড়েই সিমেন্ট। সিমেন্ট সাধারণতঃ ক্যালসিয়াম সিলিকেট ও ক্যালসিয়াম আলুমিনেটের মিশ্রণ। মিশ্রণের প্রধান প্রধান যৌগ যথাক্রমে ট্রাইক্যালসিয়াম সিলিকেট, ক্যালসিয়াম অর্থোসিলিকেট ও ক্যালসিয়াম অ্যালুমিনেট। এগুলাে ছাড়া কিছু কিছু ক্যালসিয়াম অক্সাইড ও অ্যালুমিনিয়াম ওয়াই৬৭ থাকে।

Post a Comment

Previous Post Next Post