রকেট আবিস্কারেরে কাহিনী (Rocket Discovery Stories)


 রকেটের সূচনা যে কবে, কিংবা কে যে ওর আবিষ্কর্তা, তা আজ আর বলার কোন উপায় নেই। খ্রীষ্টপূর্ব চতুর্থ শতকে রচিত চীনাদের পুস্তকে অগ্নিবাণের উল্লেখ আছে। বর্ণনা থেকে জানা যায় সেই অগ্নিবাণ ছিল হাউইর মত জিনিস।। মাথায় থাকতাে সুতীক্ষ্ম, তীরের ফলা। এটি যুদ্ধাস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা হতাে। হয়ত সেই প্রাচীনকালে ভারতবর্ষ ও অগ্নিবান প্রচলন ছিল। অপরদিকে প্রাচীন গ্রীক পুরাণ ও রকেটের উল্লেখ আছে। 

যুদ্ধাস্ত্র ছাড়া আতশবাজি হিসাবেও সেকালে বাজিকররা রকেটের ব্যবহার করতেন এবং এই উভয় কাজে রকেটের ব্যবহার হয়ে আসছিল সুদীর্ঘকাল । শুধু ১৫০০ খ্রীষ্টাব্দে ওয়ানহু নামে জনৈক চীন সম্রাট রকেটের সাহায্যে উদ্ধাকাশে আরোহণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। কথিত আছে, ওয়ান হু সশরীরে স্বর্গে যেতে চাইলে তাঁকে একটা মস্তবড় ঘুড়ির উপর বসানাে হয়েছিল এবং ঘুড়ির তলায় যুক্ত বেশ কিছু সংখ্যক রকেট বা হাতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল।

 ফল কী হয়েছিল তার উল্লেখ কিন্তু কোথাও নেই। মনে হয় সম্রাটের মৃতদেহটাই ফিরে এসেছিল। তবু বলতে হবে,ওয়ানহুই প্রথম ব্যক্তি, যিনি প্রথম রকেটের সাহায্যে আকাশে উঠেছিল।

 অনেকের মতে রকেট-চৰ্চা প্রথম চীন দেশে শুরু হয়েছিল এবং সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল ইংল্যান্ড, ইতালি ও জার্মানীতে । তবে কেউ ওকে মহাকাশের বাহন হিসেবে গ্রহণ করেনি, করেছে যুদ্ধাস্ত্র ও আতশবাজি হিসাবে। মারণাস্ত্র হিসাবে ওকে ব্যবহার করা হতাে বলে কেউ সুনজরেও দেখতাে না।

  রকেটকে নিয়ে প্রকৃত গবেষণা শুরু হয়েছে ইওরােপে নব-জাগরণের দিনে রোজার বেকনের দ্বারা। রকেট কে জনহিতকর কাজে নিয়োগ করা যায় কিনা -এ বিষয়ে চিন্তা করেন কনরাড কাইজার নামে জনৈক জার্মান । ইনি রকেটের দ্বারা দূরে খবর প্রেরণের জন্য উদ্যোগী হয়েছিলেন। অপরদিকে সে সময় রকেটের যা কিছু উন্নতি হয়েছে সে সবই জার্মানদের দ্বারা। এমনকি “রকেট” নামটা তাঁরাই প্রথম ব্যবহার করেছিলেন। 

আধুনিক সাজসরঞ্জামের সজ্জিত রকেটে ছুটে চলেছে মহাশূন্যের রহস্যময় তার দিকে।

 রকেটের নবজন্ম লাভ হয়েছে বিংশ শতাব্দীতে রুশ, মার্কিন, ফরাসী ও জার্মানী গবেষকদের দ্বারা। ঐ শতাব্দীর প্রথমভাগে রকেটকে ক্ষেপণাস্ত্রের কাজে প্রয়ােগ করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্ব মহাসমরের শেষের দিকে জার্মানীরা ওকে কাজে লাগিয়ে একটা সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিল।|

 বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে মানুষ যখন মহাকাশ বিজয়ের জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেছিল, তখন চিরকালের উপেক্ষিত ঐ রকেটের দিকে দৃষ্টি পড়েছে সবার। যেদিন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছিলেন পৃথিবীর আকর্ষণ বলকে ছিন্ন। করে ঊর্ধ্বে আরোহণ করতে গেলে সেকেন্ডে সাত মাইলের মতো গতিবেগ নিয়ে ছুটতে পারে-এমন একটি হাতিয়ার চাই। তখন সকলে রকেটের উন্নতিতে বান হয়েছে। কথিত আছে, তরল জ্বালানি পূর্ণ রকেট তৈরি এবং তাকে। মহাকাশে প্রেরণের উপযোগী করে তুলেছে মার্কিন গণিতজ্ঞ রবার্ট হাচিন্স।

আজ রকেটের কৌলিন্য বেড়ে গেছে, বাজিকর এবং যোদ্ধাদের কবল মুক্ত। মে ঝাপিয়ে পড়েছে বিশাল এক কর্মক্ষেত্রে। এখন পর্যন্ত মহাকাশে যাত্রা করতে। হলে রকেটের বহন করতে হচ্ছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post