পাখীরা আকাশে উড়ে বেড়ায়। সুন্দর ডানা দুটি
মেলে দিয়ে বায়ু-সমুদ্রে সাঁতার কাটতে কাটতে যখন তারা নীল আকাশের একপ্রান্ত থেকে
অন্যপ্রান্ত। পর্যন্ত ছুটে যায়, তখন আমরা হাঁ করে তাকিয়ে থাকি। তাদের ডানার ছন্দ
আমাদের মনকে উতলা করে, আর যখন তীরবেগে ছুটে যায় তখন মনে রােমাঞ্চ জাগে। তাই সেই
কবে আদিকালে মানুষের সখ হয়েছিল আকাশে আকাশে ঘুরেবেড়ানোর জন্য। কিন্তু পাখির মতো তা মানুষের জানা নেই, তবে কেমন করে উড়বে সে?
শিল্পীর
তুলিতে ধরা পড়েছে কৃত্রিম পাখা লাগানো একজন উড়ন্ত মানুষ। চিত্রকর ও
প্রযুক্তিবিদ-লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি পাখির মত দুই হাতে দুটো বড় বড় ডানা যুক্ত
একখানা ছবিও এঁকেছিলেন। পরবর্তীকালে ভিঞ্চির ছবি উৎসাহিত করেছেন অনেকে। তাঁর
পরিকল্পনা অনুযায়ী বেসিমার নামে এক ভদ্রলোক। লােহার ফ্রেমে কাপড় জড়িয়ে পাখীর
ডানার মত দুটো ডানা তৈরি করেছিলেন। পর ডানা বেধে চেষ্টা করেন উড়ে যেতে। তবে বেশী
কৃতিত্ব তিনি দেখাতে পারেন। কে গন। কেবল একটা বাড়ীর ছাদ থেকে অন্য একটা বাড়ীর
ছাদে উড়ে গিয়েছিলেন।
ব্রেসিয়ার তিনি কৃত্রিম মারের পরে যিনি কৃত্রিম ডানা জুড়ে
উড়তে চেয়েছিলেন-তিনি এক ফরাসি ভদ্রলোক, নাম । লােক, নাম ব্যাকভিলে। সাহসে ভর করে
তিনি ডানা ঝাপটাতো ঝাপটাতে সীন নদী পার হতে পা পার হতে চাইলেন, কিন্তু পারলেন না।
নদীর একেবারে মাঝখানেই ঝুপ করে পা ' করে পড়ে গেলেন। আবার পড়বি পড় একখানা বজরা
উপরে। ব্যাকভিলে প্রাণে ভলে প্রাণে বাঁচলেন বটে, কিন্তু বড় রকমের জখম হলেন।
একসময় ফ্রান্সের দুটি ভাই (মঙ্গলফিয়ে ভ্রাতৃদ্বয়) বুদ্ধি খরচ করে তৈরি। করলেন
একটা বেলুন। খড়কুটো জ্বালিয়ে ধোয়া দিয়ে বিরাট বেলুনটাকে ভর্তি করলেন, তারপর
চেপে বসলেন দুই ভাই। গরম ধোঁয়া ঠান্ডা হাওয়ার চেয়ে। | হালকা বলে আস্তে আস্তে
আকাশে উঠে গেল বেলুনটী। বেশ কিছুটা পথ অনুকূল। হাওয়ায় চালিতও হলাে। আকাশে ওঠার
প্রথম আনন্দ নিয়ে মাটিতে নেমে এলেন। দুই ভাই।
সারা
ইউরােপে বেলুন তৈরির ধুম পড়ে গেল যেন। কত কান্ড ঘটল, কত জনে প্রাণ হারালেন, কতজনে
নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে কোনও রকমে রক্ষা পেলেন, তবু বেলুন তৈরি বন্ধ হলােনা। তবে
সফলতা যে কিছু আসেনি, এমন। নয়। রাজিয়া নামে এক ভদ্রলোক হাইড্রোজেনকে বেলুনে
পুড়ে আকাশে। উঠলেন, জেফ্রিম নামে এক মার্কিন যুবক বেলুনে চেপে ইংলিশ চ্যানেল পার।
হলেন, কক্সওয়েল এবং গ্ল্যাসিয়াল নামে দু’জন যুবক আকাশের সাত মাইল উদ্ধ। থেকে খবর
সংগ্রহ করলেন ইত্যাদি।
শিল্পীর তুলিতে বেলুনে করে ইংলিশ চ্যানেল পার হওয়া। ৭
জানুয়ারী ১৭৯৫ খৃষ্টাব্দ কৃত্রিম ডানার মত একদিন বেলনের । বেলুনের সাহায্যে আকাশে
ও কেবল অনুকল হাত আকাশে ওঠা যায় ঠিকই, তবে ওকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। কেল
হাওয়ার ভর করে এগিয়ে যায় মাত্র। ইঞ্জিন তখন আবিষ্কার হয়ে তে রেখে আকাশে চালিত
করতে। গেছে। উৎসাহীরা চাইলেন, কোন বিশেষ যানকে ইঞ্জিনের সাহায্যে নিজের।
এই উদ্দেশ্যে প্রথম গ্লাইডার তৈরি করলেন অটো লিলিয়েন্থাল নামে একজন বিদ। গ্লাইডারে
ইঞ্জিন যুক্ত করে উড়তে গিয়ে মাটিতে আছাড় খেয়ে প্রাণ হারালেন অটো লিলিয়েন্থাল।
ললিয়েন্থালের মৃত্যুতে উৎসাহের উৎসাহে ভাটা পড়ে না। বরং নতুন এই পরিকল্পনাকে লুফে
নিলেন অনেকে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন,লিলিয়েন্থালের ত্রুটি কোথায় ছিল?
আধুনিক যাত্রীবাহী বিমান ভিসকাউন্ট ৮০০ এর ভিতরের দৃশ্য র খোঁজাখুঁজির পর শেষ
পর্যন্ত জয়লাভ করলেন আমেরিকার সাইকেল দোকানদার দুই ভাই 'মা দুই ভাই-উইলবার রাইট
এবং অরভিল রাইট। বিমান নির্মাণ ইতিহাসে এরা রাইট ভ্রায় নামে পরিচিত। অটো
লিলিয়েন্থালের প্রদর্শিত পথে এগিয়ে গিয়ে এটা প্রথমে আকাশে ওড়ার বিমান। মানুষের
দীর্ঘদিনের স্বপ্ন সফল হলো, পাখির মত সে ইচ্ছা মত উড়ে চলে আকাশে।

