ডায়নামো আবিস্কারেরে কাহিনী



 এককালে চুম্বক ও তড়িৎ এই দুই শক্তির পারস্পরিক সম্পর্ক আবিস্কারের জন্য বেশ কিছু সংখ্যক বিজ্ঞানী গবেষণার মেতে উঠেছিল। সে যুগের নামকরা। বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে ছিলেন তাদের দলে।
 একদিন একটি ফাঁপা সলিনয়েডের চারপাশে বেশ কয়েক প্যাক তামার তার জড়িয়ে এবং তারের দুপ্রান্তকে একটা অ্যামিটারের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে পরীক্ষা করছিলেন ফ্যারাডে। কাছে ছিল কয়েকটা দন্ড চুম্বক এবং একটি বিদ্যুৎ-উৎপাদক যন্ত্র। |
 এটা ওটা নিয়ে পরীক্ষা করতে করতে একসময় কী খেয়ালে হলাে তাঁর, একটা চুম্বককে হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে শুরু করলেন। হঠাৎ চোখে পড়লে, অ্যামিটারের কাঁটাটা নড়ে উঠলো।

 তবে তারে বিদ্যুৎ প্রবাহ হচ্ছে! কিন্তু কোথা থেকে এলো এই প্রবাহ! সলিনয়েড এর সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদক যন্ত্রের তে কোন যোগ নেই! তাহলে! |
 বিস্ময়বােধ করলেন ফ্যারাডে এবং অতি তুচ্ছ একটা ঘটনা হলেও সলিনয়েড ও চুম্বককে নিয়ে পরীক্ষায় মেতে উঠলেন। দেখলেন, চুম্বকটি সলিনয়েডের কাছে। আনলে অ্যামিটার কাঁটার যেদিকে বিক্ষেপ হয়, দূরে সরিয়ে আনার সময় হয়। ঠিক তার বিপরীত দিকে। অথচ চুম্বককে এক জায়গায় ধরে থাকলে বা সলিনয়েডের উপর রেখে দিলে কোন বিক্ষেপই হয় না । যেন ভারি মজা পেলেন। ফ্যারাডে |
কিছুদিন পরে ইংলন্ডের এক বিজ্ঞান প্রদর্শনীতে ফ্যারাডে প্রদর্শন করলেন। এই পরীক্ষাটি । বিজ্ঞানীরা এতদিনে বুঝতে পারছেন, বিদ্যুৎ-উৎপাদক যন্ত্র ছাড়া চুম্বকের দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা সম্ভব। কিন্তু সাধারণ মানুষ অথবা যাঁরা বিজ্ঞানকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন না, তাঁরা তড়িৎ সম্বন্ধে কতটুকুই বা বুঝবেন? তইি সেদিন ঐ পরীক্ষাটি দেখে বিজ্ঞানীরা ছাড়া অপর কেউ বিশেষ উৎসাহ বােধ করলেন না। যেহেতু ফ্যারাডে আবার ছিলেন মস্তবড় বিজ্ঞানী, দেশজোড়া ছিল নাম ডাক-তাঁর এমন একটা ছেলেমানুষী খেলা দেখে কেউ কেউ আড়ালে মুখ | টিপে হেসেছিলেন।

একজন মহিলা মনে হয় ফ্যারাডে সম্বন্ধে বড় একটা খোঁজখবর রাখতেন। । পরীক্ষাটি দেখে তাচ্ছিলাের সুরে বলেছিলেন-“পরীক্ষাটি না হয় দেখলাম । কিন্তু এটি কী কাজে লাগবে মানুষের!” ফ্যারাডে অত্যন্ত শান্ত ও সংযত সুরে উত্তর দিয়েছেন-“আপনারা ছোট শিশুদের কেন লালন পালন করেন?”

 মহিলাটি সেদিন ফ্যারাডের কথার কোন জবাব দিয়েছিলেন কিনা জানা যায় । তবে কয়েকদিন পর ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রদর্শনী দেখতে এসে সেই একই ধরনের প্রশ্ন করায় ফ্যারাডে বেশ একটু ক্ষুন্ন হয়েছিলেন। বলেছিলেন-“আজ। গাকে তুচ্ছ বলে মনে করছেন, ভবিষ্যতে এমন দিনও আসতে পারে- যেদিন এই চেছ ঘটনাকে নিয়ে আবিস্কৃত হবে, কোন যন্ত্র। ততদিন যদি আপনি ঐ পদে বহাল কেন, তাহলে হয়ত ঐ যন্ত্র থেকে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা রোজগার করতে পারবেন।”

একটি আধুনিক বিদ্যুৎ উৎপাদক ডায়নামাে ফ্যারাডের কথা কিন্তু মিথ্যে হয়নি । বিজ্ঞানীরা অচিরে বুঝতে পেরেছিলেন, কোন শক্তিশালী চুম্বকের কাছে তামার তারের কুন্ডলী বা আর্মেচারকে ক্রমাগত ঘোরাতে থাকলে চুম্বক বলরেখা ছিন্ন হয় এবং তারে বিদ্যুতাবেশ ঘটে। ঐ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একদিন আবিস্কৃত হলো ডায়নামো ।আর ঐ ডায়নামো আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গেই যন্ত্রযুগকে অতিক্রম করে মানুষ বিদ্যুতের যুগে পদার্পণ।

| ফ্যারাডে তাই যুগস্রষ্টা বিজ্ঞানী। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তিনি এই বিপ্লব দেখে যেতে পারেননি। তাঁর মত্যর প্রায় অর্ধশতাব্দী পরে অতি মন্থর গতিতে সূচিত হয়েছিল সেই বিপ্লব।

Post a Comment

Previous Post Next Post