টর্পেডাে (Torpedo)কি কেনো কিভাবে আবিষ্কার হলো

 টর্পেডাে


টর্পোভাে হচ্ছে এক রকমের ডুবাে বােমা। এই বােমার এত প্রচন্ড শক্তি যে, একটা বৃহৎ জাহাজকে সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংস করে পানির তলায় ডুবিয়ে দিতে পারে! টর্পোভাে আবার স্বয়ংচালিত। জাহাজ ধ্বংস করার কাজে সাবমেরিন বা জুবােজাহাজই ওকে ব্যবহার করে থাকে।



টর্পেডােতে থাকে শত্রু জাহাজ অনুসন্ধানের নিমিত্ত স্বয়ংক্রিয় ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি, আর থাকে একটি বিস্ফোরক কক্ষ। ওকে চালনা করা হয় ইলেকট্রিক মােটরের সাহায্যে। কখনও কখনও ইঞ্জিনও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যখনই টর্পেডােকে জুবােহাজাজ থেকে নিক্ষেপ করা হয় তখনই লিভারের সাহায্যে যন্ত্রপাতিসমূহ কার্যকরী হয়ে উঠে । দূরবর্তী জাহাজের শব্দ অনুসন্ধানের জন্য আপনা হতে ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিসমূহ সক্রিয় হয়।


প্রবণের উপযােগী যন্ত্রও বসান তাকে টর্পেডােতে। জাহাজের শব্দ শুনেই শব্দকে অনুসরণ করে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যায় টর্পেডাে। তারপর জাহাজের কাছাকাছি এলে চুম্বক শক্তির দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে প্রচন্ডভাবে জাহাজের গায়ে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা লাগার সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটে এবং জাহাজের তলদেশ ফেটে চৌচির হয়ে যায়। তাছাড়া জাহাজের গায়ে আগুন ধরে যায় এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই জাহাজটির সলিল সমাধি ঘটে। টর্পোেের ওজনও কম নয়। এক একটার ওজন দশ থেকে বিশ টন পর্যন্ত হয়ে থাকে।



টর্পেডাের আবিষ্কারক অস্ট্রিয়ার নৌ-সেনা বিভাগের অধ্যক্ষ স্যার লুপিস। ১৮৬৮ খ্রীষ্টাব্দে জাহাজ ধ্বংস করার জন্যেই নির্মিত হয়েছিল। তবে সে সময় ওকে ব্যবহার করা হত না। কিন্তু তৈরি করার পদ্ধতিটি জেনে নিয়েছিল অনেক দেশ। টর্পেডাে প্রকৃতপক্ষে ব্যবহৃত হয়েছিল ১৮৮৪ খ্রীষ্টাব্দে। জাপান ও রাশিয়ার মধ্যে ঐ বছরে যে যুদ্ধ হয়েছিল, তাতে জাপানীদের টর্পেডাে ছিল এক রকম স্বয়ংচালিত বােমা। ওজনও তত বেশী ছিল না। এবং যন্ত্রপাতিও তেমন কিছু ব্যবহার করা হত না সে সময় টর্পেডােকে দূর থেকে শত্রু জাহাজের দিকে নিক্ষেপ করা হত।


টর্পেডােকে ভয়াবহ করে গড়ে তােলার মূলে আছে জার্মানীদের প্রচেষ্টা। দুটি বিশ্বযুদ্ধে টর্পেডােকে কাজে লাগিয়ে সমুদ্রের বুকে একরকম বিভীষিকার সৃষ্টি করেছিল জার্মান সাবমেরিনগুলাে। তবে জার্মানদের সেই টর্পেডাে আর নেই। বর্তমানে ওর ভয়াবহতা অনেক গুণে বেড়ে গেছে। উন্নত গবেষণার ফলে পূর্বের টর্পেডাের সবরকমের ক্রুটি দূর করা হয়েছে। যার জন্য আজকের টর্পেডাে আরও দ্রুতগতিসম্পন্ন এবং নিশানাও এদের অব্যর্থ।

Post a Comment

Previous Post Next Post