প্লাষ্টিক(Plastic) কি কেনো কিভাবে আবিষ্কার হলো

 প্লাষ্টিক


শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলি যখন নবাবিস্কৃত সেলুলয়েডকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করতে লাগল প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়ােজনীয় নানাবিধ জিনিসপত্র, কত ধরণের সৌখিন জিনিস, কত খেলনা, ইত্যাদি। দামে সস্তা এবং দেখতে সুন্দর সেলুলয়েড দু'দিনেই জনচিত্ত জয় করে নিল।



এমন চমৎকার যে সেলুলয়েড তারও একটা মস্তবড় ত্রুটি ছিল। সে ক্রুটিটা হল, কোন প্রকারে আগুনের সংস্পর্শে এলেই দাউ দাউ করে জলে উঠত। তাই যাঁরা সেলুলয়েড ব্যবহার করতেন তাঁদের যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হত। বিজ্ঞানীরা কিন্তু চুপ করে বসে রইলেন না। সেলুলয়েডের এই ক্রুটিটুকু দূর করতে হলেন বদ্ধপরিকর। কিন্তু হায়! কতদিন, কতমাস, শেষে কত বছর গড়িয়ে গেল, তবুও কোন বিজ্ঞানী আবিস্কার করতে পারলেন না অদাহ্য। সেলুলয়েক।


বাধ্য হয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলােকে ঐ দাহ্য সেলুলয়েডকে নিয়েই কাজ করতে হল। ১৬১৯ খ্রীষ্টাব্দে হায়াট তৃদ্বয় যে সেলুলয়েড তৈরি করেছিলেন, সেই সেলুলয়েডের যুগই চলেছিল দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে। তাপর ইউরােপের মাথার উপর জ্বলে উঠল প্রথম বিশ্ব মহাসমরের আগুন। প্রথমে ধিকি ধিকি তার পরই দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে সারা পৃথিবীটাকে গ্রাস করে নিল। চারদিকে গুলি গােলা, বারুদ-বিশ্ফোরক পদার্থ তৈরির ধুম পড়ে গেল। নিত্য নতুন সমরা্ত্র এবং বিস্ফোরক প্রস্তুতির জন্য রাষ্ট্রগুলােও নিয়ােগ করল হাজার হাজার বিজ্ঞানীকে। বেশীর ভাগ বিজ্ঞানীই পার্কসের তৈরি নাইট্রো সেলুলােজকে নিয়ে মেতে রইলেন। শেষে অবলীলাক্রমে এক বিজ্ঞানী একদিন তৈরি করে ফেললেন সেলুলােজ অ্যাসিটেট নামে সেলুলয়েডের সমগােত্রীর এক ধরণের জিনিস-যা আগুনের স্পর্শে জ্বলে উঠল। না। মানুষের বহুদিনের আশা পূর্ণ হল। বস্তুটির নাম রাখা হল সেলুলােজ অ্যাসিটেট প্লান্টিক।



নাম থেকেই বােঝা যায় সেলুলােজের সঙ্গে অ্যাসেটিক অ্যাসিড মিশিয়ে সেলুলােজ অ্যাসিটেট প্লাস্টিক তৈরি হয় । অর্থাৎ সেলুলােজের সঙ্গে নাইট্রো অ্যাসিড মেশালে হয় নাইট্রো সেলুলােজ আর অ্যাসেটিক অ্যাসিড মেশালে হয় সেলুলােজ অ্যাসিটেট। সেলুলােজ অ্যাসিটেটকে কঠিনে রূপান্তরিত করলে যে বস্তুটি পাওয়া যায়, তার নাম সেলুলােজ অ্যাসিটেট প্লান্টিক বা সংক্ষেপে শুধু প্লান্টিক।


আজকের দিনে আমরা যে সব নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র ব্যবহার করছি যেমন চিরণী, বােতাম, ছাতার বাঁট, ফিতা, প্যাকেট, খেলনা, ফাউন্টেন পেন প্রভৃতি প্রায় সবগুলিই ঐ জাতীয় প্লান্টিক। এরা আগুনের সংস্পর্শে এলে জ্বলে উঠে না। তবে যেখানে আগুন লাগে, সেইখানটায় গলে যায়।


সেলুলােজ অ্যাসিটেট প্লাস্টিকও সম্পূর্ণ ত্রুটি নয়। ধীরে ধীরে ধরা পড়ে, ওরা বাতাস থেকে জলীয় বাষ্প শােষণ করে নেয় এবং কিছুদিন পরে অব্যবহার্য হয়ে পড়ে। ফলে পুনরায় শুরু হয় গবেষণা। সর্বশেষে সেলুলােজের সঙ্গে অ্যাসেটিক অ্যাসিড এবং প্রােপিওনিক অ্যাসিড নামে দু'টি অ্যাসিড মিশিয়ে তৈরী করা হল সেলুলােজ অ্যাসিটেট প্রােপিওনেট প্লাস্টিক। এবার সত্য সত্যই ক্রুটিমুক্ত হল প্লাস্টিক। এই ক্রুটি মুক্ত প্লাস্টিককে কাজে লাগিয়ে তৈরি হচ্ছে বহু মূল্যবান জিনিস। তাদের মধ্যে সুন্দর ও সৌখিণী দ্রব্য, রেডিও ক্যাবিনেট, টেলিফোন যন্ত্র। প্রভৃতি প্রধান।



এই প্লাষ্টিক আগুনের স্পর্শে এলে জুলে না। অধিকন্তু এর কোন খারাপ গন্ধও নেই। যান্ত্রিক উপায়ে ওকে অতি সূক্ষ্ম সুখ তস্তুতে পরিণত করে খুব সুন্দর রেয়ন প্রকৃত করা হচ্ছে । সত্য কথা বলতে কী, আজকার রঙ বেরঙের প্লাস্টিক সূতায় বাজার এক রকম ছেয়ে গেছে!

Post a Comment

Previous Post Next Post