নিষ্ক্রিয় গ্যাস
সব জায়গায় বায়ুতে নাইট্রোজেনের পরিমাণটা সমান কিনা- বেশ কিছুদিন ধরে পরীক্ষা চালালেন বিজ্ঞানী ক্যাভেন্ডিস। একবার কষ্টিক সােডা দ্রবণের উপর অতিরিক্ত অক্সিজেনযুক্ত বায়ুকে পুনঃপুনঃ বিদ্যুৎ-স্ফুলিঙ্গ প্রয়ােগ এবং বাড়তি অক্সিজেনকে পটাসিয়াম সালফাইড দিয়ে শােষণ করিয়েও কিছু অবশেষ লাভ করলেন। পরিমাণটা মূল বায়ুর ১২০ ভাগের একভাগ মাত্র ছিল। পরীক্ষা করে দেখলেন, গ্যাসটি নাইট্রোজেন অপেক্ষাও নিষ্ক্রিয়। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও গ্যাসটিকে সনাক্ত করতে তিনি পারলেন না (১৭৮৫ খ্রীঃ)।
বিজ্ঞানী র্যালে ১৮৯৪ খ্রীষ্টাব্দে গ্যাসীয় পদার্থগুলাের ঘনত্ব নির্ণয় করতে গিয়ে বাতাস থেকে প্রাপ্ত নাইট্রোজেন এবং রসায়নাগারে উৎপন্ন নাইট্রোজেন- উভয়ের ঘনত্বের সঙ্গে মিল আছে কিনা জানার জন্য কৌতুহলী হয়ে ওঠেন। শেষে দেখলেন, এক লিটার বায়ুর নাইট্রোজেনের প্রমাণ অবস্থায় ওজন ১.২৫৭২ গ্রাম এবং রাসায়নিক উপায়ে প্রস্তুত নাইট্রোজেনের ওজন ১.২৫০৬ গ্রাম। র্যালে এই ঘটনাকে পরীক্ষাগত ত্রুটি বলে ভাবতে পারলেন না। তাঁর যেন ধারণা হলাে, বাতাসে পরিচিত গ্যাসগুলাে ছাড়াও অন্য কোন অজানা গ্যাস আছে।
র্যালে তাঁর পরীক্ষার কথা জানালেন অপর একজন রসায়নবিজ্ঞানী র্যামজেকে। র্যালে এবং র্যামজে দুজনেই এবার একযােগে শুরু করলেন। পরীক্ষা। একদিন দুজনেই পৃথক পৃথকভাবে গ্যাসটিকে বায়ু থেকে আলাদা করতে সমর্থ হলেন। র্যামজেই উক্ত গ্যাসটির নামকরণ করেন “আর্গন” বা অলস।
হিলিয়াম আবিষ্কারের কাহিনী বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। আর্গন আবিষ্কারের বহু পূর্বে ১৮৬৮ সালে জানসেন নামে এক বিজ্ঞানী পূর্ণ সূর্যগ্রহণের সময় বণালী পরীক্ষা করতে গিয়ে এক ধরণের হালকা হলদে রেখা দেখতে পান। ঐ বর্ণালীকে পরীক্ষা করার পর ফ্রাঙ্কল্যান্ড এবং লকিয়ার নামে দু’জন বিজ্ঞানী সিদ্ধান্তে আসেন, এটি এমন গ্যাসের বর্ণালী-যা গ্যাসীয় সৌর আবরণেই থাকে। পৃথিবীতে এর কোন অস্তিত্ব নেই। গ্রীক হেলিওস অর্থে সূর্য। তাই ওর নামকরণ করা হয়েছিল হিলিয়াম।
পৃথিবীতে ইউরেনিয়াম খনিজে অন্তর্ধূত অবস্থায় উক্ত গ্যাসটির অস্তিত্বের কথা প্রথম ঘােষণা করেছিলেন বিজ্ঞানী হিলডেব্র্যান্ড এবং ক্লিভাইট। পরে ১৮৯৫ সালে বিজ্ঞানী কাইজার বায়ুতে ওর অস্তিত্ব প্রমাণ করেন।
বায়ুতে ওর অস্তিত্ব ধরা পড়ার পর বিজ্ঞানীরা আরও উৎসাহিত হলেন। ভাবলেন, আরও হয়ত বায়ুতে কোন কোন গ্যাস লুকিয়ে আছে-যার সন্ধান এখনও কেউ দিতে পারেননি। যদি থাকে তাহলে কেমন করে ওদের সনাক্ত করা যাবে?
অনেক ভেবে বিজ্ঞানীরা এবার তরল বায়ুকে নিয়ে শুরু করলেন গবেষণা। শেষে জয়যুক্ত হলেন সেই রামজে এবং তাঁর সহযােগী ট্রাভার্স। ১৮৯৮ সালে তরল বায়ুকে অংশপাতিত করতে গিয়ে লাভ করলেন নতুন এক নিষ্ক্রিয় গ্যাস। নতুন বলেই সেই গ্যাসটির নামকরণ করেন নিয়ন। তারপর এঁরা দুজনেই আবিষ্কার করেন ক্রিপটন এবং জেননকে। ক্রিপটন অর্থ গুপ্ত এবং জেনন অর্থ আগন্তুক।
শেষ নিষ্ক্রিয় গ্যাসটি আবিষ্কৃত হয়েছে ১৯১৮ সালে তেজস্ক্রিয়তার ফলে ক্ষয়জাত পদার্থ থেকে। বিজ্ঞানী স্নিড" এর নামকরণ করেছেন র্যাডন। এই পরিবারের সবাই কোন মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের সঙ্গে ক্রিয়া করে না। তাই ওদের বলা হয় নিষ্ক্রিয় গ্যাস। এর কারণ, এদের প্রত্যেকের পরমাণুর বাহিরের খােলটা আটটি ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ থাকে। ঐ বৈশিষ্ট্রের জন্য ওদের "নােবল গ্যাস বা উত্তম গ্যাসও বলা হয়। অপরদিকে র্যাডন ছাড়া অপরাপর সবগুলিকে বাতাসে অতি অল্প-পরিমাণে পাওয়া যায়। তাই বিরল গ্যাসও বলে এদের। নিষ্ক্রিয় হওয়ার জন্য এবং বাতাসে বিরলভাবে অবস্থান করার জন্য এদের আবিষ্কার করতে এত বিলম্ব হয়েছে।
