জিলাটিন ডিনামাইট (Gelatin dynamite) কি কেনো কিভাবে আবিষ্কার হলো।

 জিলাটিন ডিনামাইট


একদিন আপন রসায়নাগারে কাজ করছিলেন নােবেল। দৈবক্রমে কাচের টুকরাে লেগে তাঁর ডান হাতের কড়ে আঙুলটা একটু কেটে গেল। বিশ্ফোরক পদার্থ নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে বলে কাটা অংশটার উপর একটা আন্তরণ দিয়ে ভালভাবে ঢেকে দেওয়ার জন্য লাগিয়ে দিলেন কলয়ডিয়ন।


F (সেলুলােজকে সালফিউরিক অ্যাসিড ও নাইট্রিক অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটালে গান কটন তৈরি হয় এবং গান কটনকে ইথার ও অ্যালকোহলের মিশ্রণে গলিয়ে নিলে প্রস্তুত হয় কলয়ডিয়ন।)



নােবেল আঙুলে কলয়ডিয়ন লাগিয়ে পুনরায় কাজে মন দিলেন। যে পরীক্ষাধীন বস্তুটিকে নিয়ে কাজ করছিলেন, তারই সঙ্গে সংমিশ্রণ হল কলয়ডিয়নের। পরীক্ষাধীন বস্তুটির সঙ্গে নাইট্রোগ্লিসারিন ও ছিল। অল্প পরে বুঝতে পারলেন নােবেল, দৈবক্রমে যে জিনিসটি তিনি পেয়ে গেলেন তার বিস্ফোরণ ক্ষমতা যে কোনও ডিনামাইটের চেয়ে বেশি। এই বিস্ফোরকটির নাম হল বিস্ফোরক জিলেটিন।


| নােবেল এবার তৈরি করলেন জিলেটিন ডিনামাইট। নিজেই বিস্মিত হলেন জিলেটিন ডিনামাইটের বিস্ফোরণ ক্ষমতা দেখে। অপরদিকে দেখা গেল, এই ডিনামাইটের সুবিধা অনেক বেশি। পানিতে ভিজে গেলে নষ্ট হয় না, মাটির. কেরে গর্ত করেকিয়ে নিয়েও বি্বোারণ ঘটানাে যায় এবং বহন করাও অনেক বেশি নিরাপদ। একদিনে নােবেলের মনােবাঞকা পূর্ণ হল। তিনি যেমনটি মেয়েছিলেন, ঠিক সেই মত এত হল ডিনামাইট।



সযার আলয়েড বানাড নােবেল নানা ধরণের ডিনামাইট তৈরি করে এ অর্থ উপার্জন করেছিলেন। তার সঞ্চিত অর্থের একটা মোটা অংশ তিনি দান করে গেলেন পৃথিবীর বিশিষ্ট আবিষ্কারকসের পুরকার প্রদানের জন্য। দাতার নামানুসারে পুরস্কারটির নাম নােবেল পুরষ্কার। পুরফারের অঙ্কটা বেশ মােটা; অর্থাৎ পৃথিবীতে নােবেল পুরস্কারের মত মোটা অঙ্কের পুরফার দ্বিতীয়টি নেই।


নােবেল তাঁর উইলে বলে গেছেন, সেরা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ছাড়াও অপর দুটি বিষয়ে এই পুরস্কার প্রদান করতে হবে। একটি বিশ্বের সেরা সাহিত্য ক জন্য, অপরটি শান্তির জন্য।


নােবেল বােধ হয় বুঝতে পেরেছিলেন, ডিনামাইট আবিষ্কার করে তিনি পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজের সূচনা করে গেলেন। তাই শান্তির জন্য একটি পুরস্কার।


আজকাল অবশ্য ডিনামাইটের চেয়ে লক্ষ লক্ষ গুণে ধ্বংসাত্মক জিনিস আবিষ্কৃত হয়েছে। সামান্য বিস্ফোরক নিয়ে আজ মানুষ মাথা ঘামাচ্ছে না। সে এখন পরমাণু শক্তিতে বলীয়ান। এসব আবিষ্কারের জন্য নােবেল দায়ী নন। তাছাড়া আবিষ্কারক তিনি। সমুদ্র মন্থনে অমৃতের সঙ্গে গরলও উঠেছিল। আবিষ্কারকদের কাছ থেকে আমরা কেমন করেই বা শুধু আশা করব কেবলমাত্র কল্যাণকর জিনিস। প্রত্যেকটি জিনিসের যেমন একটা অন্ধার দিক থাকে, তেমন। তার উজ্জ্বল দিকও থাকে। ডিনামাইটের উজ্জ্বল দিকটা আমাদের সচরাচর চোখে পড়ে না। অথচ পাহাড় কেটে তার ভেতর দিয়ে রাস্তা তৈরি করতে হলে ডিনামাইটের দরকার, নদীগর্ভ গভীর করে পুল তৈরি করতে হলে ডিনামাইট অপরিহার্য, তৈল অনুসন্ধান কাজেও প্রয়ােজন হয় ডিনামাইটের। এইসব কাজ লােকজন দিয়ে করাতে হলে একদিকে যেমন প্রয়ােজন হত দীর্ঘ সময়ের, অপর দিকে তেমনই দরকার হত প্রচুর অর্থের। সভ্যতার অগ্রগতিতে ডিনামাইটের এমনকি আণবিক বােমারও প্রয়ােজন আছে।



এক কথায় কোন আবিষ্কারই অকল্যাণকর নয়। মানুষের স্বার্থবুদ্ধিই তার জন্য একমাত্র দায়ী । মাঝে মাঝে আমাদের শুভবুদ্ধি স্বার্থবুদ্ধির দ্বারা আচ্ছন্ন হয়ে উঠে। মহান বিজ্ঞানীদের আজীবন সাধনার ফলকে আমরা নিয়ােগ করি ধ্বংসাত্মক কর্মে। কল্যাণকর রূপ চাপা পড়ে যায় এবং বিশ্বের মানুষের কাছে ভীতিস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়। এগুলিকে বিজ্ঞানের অপপ্রয়ােগই বলা যেতে পারে।

Post a Comment

Previous Post Next Post