লেসার রশ্মি
আধুনিক বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান হ'ল লেসার রশ্মির আবিষ্কার। এটি আবিষ্কৃত হয়েছে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। আবিষ্কর্তার নাম অধ্যাপক চার্লস এইচ. টাউনেস। এই মহত্তর আবিষ্কারটির জন্য ১৯৬৪ খ্রীষ্টাব্দে তাকে নােবেল পুরস্কার ভূষিত করা হয়েছে।
লেসার রশ্মি আবিষ্কারের পর প্রথম প্রয়ােগ হয়েছিল ১৯৬২ খ্রীষ্টাব্দে।। আমেরিকার লিঙ্কন গবেষণাগার থেকে এই রশ্মি উৎপাদন করিয়ে পৃথিবী থেকে দু'লক্ষ চব্বিশ হাজার মাইল দূরে চন্দ্রপৃষ্ঠে আপতিত করা হয়েছিল। প্রতিফলিত রশ্মিকে দূরবীনের সাহায্যে প্রত্যক্ষ করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। সময় লেগেছিল মাত্র আড়াই সেকেন্ড। এতদূর পথ অতিক্রম করে ফিরে আসার ক্ষমতা কোন কৈন্যুতিক বাল্বের নেই। তাছাড়া সেদিন এই পরীক্ষাটির মাধ্যমে নিখুঁতভাবে মাপা হয়েছিল পৃথিবী থেকে চন্দ্রের প্রকৃত দূরত্ব।
লেসারের পুরাে নাম হচ্ছে Light Amplification by Stimulated Emission of Radiation. এতবড় শব্দগুচ্ছের সব সময় উচ্চারণ করা অসুবিধাজনক। তাই শব্দগুলির আদ্যক্ষর দিয়ে গঠন করা হয়েছে একটি বিশেষ LASER প্রকৃতপক্ষে লেসার একটি সংক্ষিপ্ত নাম ছাড়া কিছুই নয়।
বিজ্ঞানীরা বলেন, সার রশ্মি সাধারণ আলােক রশ্মির ধর্মকে মেনে চলে। “আলাের কণিকা মতবাদ", নামে যে বিশেষ মতবাদটি আছে সেই মতবাদকেও মেনে চলে লেসারের তত্ত্ব। তাছাড়া 'প্যাঙ্ক' আবিষ্কৃত কোয়ান্টাম থিওরীরও। বিরুদ্ধাচরণ করে না।
আবিষ্কারের কয়েক বছরের প্রধাই করে লেসার আবিৃত হয়েছে। তবে সর্বপ্রথম যেভাবে লেসার প্রস্তুত করা হয়েছিল, সেই পদ্ধতিটিই সংক্ষেপে বলা হল। বিজ্ঞানী টি,এইত, যেইমানই প্রথম লেগ তৈরীর কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন এবং প্রদর্শন করেছিলেন ১৯৬০ খ্ের জুলাই মাসে।
লেসার রশ্মির তবিষ্যাৎ খুবই উজ্জল। ইতামধাে আমেরিকা এবং পাশ্চাতের অন্যান্য দেশগুলি এই বাকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে চলেছে। বিশেষত। জীবন বিজ্ঞানে এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে তারা এই রশির ব্যবহার করে
যথেষ্ট সুফল পাচ্ছেন। তাছাড়া পাশ্চাত্যের দেশসমূহ রেডার যন্ত্র এবং টেলি যােগাযােগ ব্যবস্থায়ও ধীরে ধীরে ব্যবহার করছে লেসার রশ্মিকে। এই রশ্মির একটা খারাপ দিক আছে। এখান থেকে যে তাপ উৎপন্ন হয় তার পরিমাণ কয়েক হাজার ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। এই তাপমাত্রায় পার্থিব কোন জিনিস কঠিন কিংবা তরল অবস্থায় থাকতে পারে না। মুহূর্তের মধ্যে গ্যাসে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। এমন ভয়াবহ যার তাপশক্তি, তাকে শক্তির অহঙ্কারী মানুষ কাংসাযক
কাজেও ব্যবহার করতে পারে এবং করার চেষ্টাও হচ্ছে। তবে এর কল্যাণকর দিকটিও বড় কম নয়। এত প্রচন্ড তাপ উৎপন্ন করতে পারে বলে বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে লেসার রশ্মিকে প্রয়ােগ করা যেতে পারে। এখনই তাে ব্যবহার করা হচ্ছে হীরক প্রভৃতি শক্ত পদার্থকে ছিদ্র করার কাজে কিংবা সুক্ষ্ তারকে জোড়া লাগানাের কাজে। চিকিৎসকরা চক্ষুচিকিৎসার কাজেও ব্যবহার করতে আরম্ভ করেছেন লেসার রশ্মিকে, ক্যান্সার নিরাময়ের জন্য লেসার রশ্মিকে ব্যবহার করা চলবে। পরীক্ষা করে তাঁরা দেখেছেন, এই রশ্মি সুস্থ কোষের উপর কোন খারাপ প্রতিক্রিয়া করে না অথচ ক্যান্সারদৃষ্ট কোষসমূহকে নষ্ট করতে পারে।
বিজ্ঞানীরা আরও আশা পােষণ করেন। তাঁদের ধারণা, লেসার বেতার ও টেলিভিশনের ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা করবে। বিশেজ্ঞদের মতে উপযুক্ত লেন্সের সাহায্যে লেসার রশ্মিকে প্রয়ােগ করলে যে প্রচন্ড তাপ পাওয়া যাবে, তাকে যথাপযুক্তভাবে ব্যবহার করে বিস্তর কলকারখানা চালানাে যাবে। ফলে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান ঘটবে। কেউ কেউ মন্তব্যও করে থাকেন, একটি মাত্র লেসার রশ্মির সাহায্যে হাজার হাজার টেলিভিশন এবং লক্ষ লক্ষ টেলিফোন চালানাে যেতে পারে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের আশা, মহাকাশের দূরবর্তী গ্রহ- নক্ষত্রাদির সঙ্গে বার্তা বিনিময়ের ব্যাপারে ভবিষ্যতে লেসার হবে একমাত্র
হাতিয়ার ।

