পোলােনিয়াম ও রেডিয়াম
হেনরি বেকারেল মামে একজন বিজ্ঞানী পটাসিয়াম ইউরানিল সালফেট নামক একটি যৌগিক পদার্থকে নিয়ে পরীক্ষা করতেন। একবার একখানা ফটোগ্রাফিক প্লেটকে কালাে কাগজে গুড়িয়ে তুলে সেজেছিলেন দেবাজে। আবার ভুলক্রমে এতটুক ইউরেনিয় মত পাতকে কাজে জড়িয়ে রেখে দিয়েছিলেন সেইখানেই। একটা ছবিও পড়েছিল সেখানে। পরে একজিয কী একটা দরকারে ফটোগ্রাফিক টেটাকে ডেভেলপ করতে গিয়ে দেখেন, টের উপর ভেসে উঠেছে একটা ভ্যধির ছবি।
বিস্তর খোঁজাখুজির পর হসিস পেলেন চাধিটার। তখনই সিদ্ধান্তে এলেন, ইউরেনিয়াম ধাতুটা সর্ব অবস্থায় স্বতস্ফূর্তভাবে এ ধরণের রশ্মি বিকিছুণ করে। ঐ রশি৷ অনায়াসে ধাতুর পাত ভেদ করে চলে যেতে পারে এবং অন্ধকারেও ফটোগ্রাফিক প্লেটের উপর ক্রিয়া করতে পারে।
ইউরেনিয়াম ধাতুটির এই অদ্ভুত ক্ষমতার পরিচয় পেয়ে আরও পরীক্ষা চালালেন বেকারেল। প্রমাণিত করলেন, ঐ রশ্মি যখন কোন গ্যাসীয় অথবা বায়ু মাধ্যমে প্রবাহিত হয়, তখন গ্যাস কিংবা বায়ুকে আয়নিত করে দেয়। প্রকৃত্তপক্ষে সেই দিনই ক্যাথড রশ্মি এবং ও' রশ্মির স্বরূপ উদঘাটিত হয়।
বেকারেলের আবিষ্কার বিজ্ঞানী মহলে এক দারুণ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। বহু জনেই মেতে উঠলেন ইউরেনিয়াম এবং তার যৌগিকগুলিকে নিয়ে। শেষে ধরা পড়ে, ইউরেনিয়ামের আকরিত পিচরেভের তেজস্ক্রিয়তা ইউরেনিয়াম অপেক্ষা অনেক বেশী।
এবার তেজস্ক্রিয়তা সম্বন্ধে একটু বলতে হয়। প্রকৃতিতে এমন কিছু কিছু মৌলিক পদার্থকে পাওয়া যায় যাদের দেহ থেকে যে কোন অবস্থায় আলাে কিংবা অন্ধকারে সব সময় একধরণের রশ্মি নি্গত হয়। ঐ রশ্মি নির্গমণ ক্রিয়াকে বলে তেজস্ক্রিয়তা এবং যাদের দেহ থেকে অনুরূপভাবে রশ্বি নির্গত হয় তাদের কলা হয় তেজস্ক্রিয় মৌলিক পদার্থ। ইউরেনিয়াম, থােরিয়াম, রেডিয়াম, পুটোনিয়াম প্রভৃতি ধাতু এই শ্রেণীতে পড়ে। তেজস্ক্রিয়তাকে ইংরাজীতে বলা হয় রেডি সি অ্যাকটিভিটি। স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ইংরেজী শব্দটির বাংলা রূপান্তর করেছেন।
বেকারেলের সময় ফ্রালে এক গবেষণা পাগলু দম্পতি বাস করতেন। নাম তাঁদের পিয়েরে কুরি ও মাৱি কুরি। বড় গরীব ছিলেন তাঁরা। কিন্তু দারিদ্র্যের কাছে কখনও মাথা নত করতেন না। পিচরেত্তের তেজস্ক্রিয়তার কথা শুনে ছিঃ করলেন আঁরাও গবেষণা করবেন। কিন্তু গবেষণাগার কোথায়। যন্ত্রপাতি কেথায়? পিচব্লেন্ড কেনার পয়সা কোথায়।
না, হার মানলেন না তাঁরা। এক বন্ধুকে অনুরোধ করায় ইউরেনিয়াম নিকাশণ করে নেওয়ার পর কিছু পরিত্যক্ত পিচব্লেন্ড পাঠিয়ে দিলেন। আর পিয়েরে যে স্কুলে শিক্ষকতা করতেন সেই স্কুলেরই পরিত্যক্ত একটা ভাঙ্গা মেশিন ঘরকে গবেষণাগার বানালেন। স্কুল কর্তৃপক্ষের এই বদান্যতায় তাঁরা হাতে স্বর্গ পেলেন যেন।
উভয়ে এবার মহা উৎসাহে গবেষণায় লেগে গেলেন। ঘরটার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, প্রচন্ড ধোঁয়া এবং বিদঘুটে গন্ধ কোন কিছুই তাঁদের মনােবলকে নষ্ট করতে পারলাে না। রাত দিন পড়ে রইলেন সেই গবেষণাগারের মধ্যে। শেষে জয় হলাে তাঁদের। প্রচন্ড পরিশ্রম করতে করতে একদিন সেই পিচব্লেন্ড থেকেই সংগ্রহ করলেন আর একটি তেজস্ক্রিয় মৌলিক পদার্থ। মারি কুরির জন্মস্থান পােল্যান্ডের নামানুসারে পদার্থটির তাঁরা নামকরণ করলেন পােলােনিয়াম। এর তেজস্ক্রিয়তা দেখা গেল ইউরেনিয়াম অপেক্ষা প্রায় তিনশ' গুণ বেশী।
কুরি দম্পতির আবিষ্কার এইখানে সীমাবদ্ধ রইল না। একদিন তাঁরা লক্ষ্য করলেন পােলােনিয়াম পৃথক করে নেওয়ার পর যে তরল অবশেষটি পড়ে থাকে তাতেও থাকে তেজস্ক্রিয়তার গুণ। ভাবলেন, ওতেও হয়ত কোন তেজস্ক্রিয় পদার্থ থাকতে পারে। তাই সেই তরলকে নিয়েই পুনরায় শুরু করলেন গবেষণা এবং দীর্ঘ দেড় বছর পরে আবিষ্কার করলেন রেডিয়াম নামে আর একটি তেজস্ক্রিয় মৌলিক পদার্থ।
একাধিক তেজস্ক্রিয় পদার্থ আবিষ্কারের মাধ্যমে কুরি দম্পতির হাতেই প্রকৃতপক্ষে সূচনা হয়েছে পারমাণবিক যুগের।