নীল কি কেনো কিভাবে আবিষ্কার হলো।

 নীল


অসাধু ও দুর্নীতিপরায়ণ নীলকরদের অত্যাচারে সােনার বাংলা শ্মশান হতে বসেছিল । একদিন তারা ব্যবসা বন্ধ করেছিল। কারণটা হলো, একদিন একরকম আকস্মিকভাবে এক তরুণ রসায়ণবিজ্ঞানী কৃত্রিমভাবে নীলরঙ প্রস্তুতির পদ্ধতি আবিষ্কার করে নীল গাছ থেকে প্রস্তুত নীল অপেক্ষা কৃত্রিম নীল উৎকুষ্ট হলাে এবং দামেও সস্তা হলাে। তখনই নীলকররা বুঝতে পারলাে, ব্যবসা আর জমকে । তাই রাতারাতি তল্পিতল্পা বেঁধে বাংলা ছেড়ে পালিয়েছিল।


এই নীল রঙ আবিষ্কারের কাহিনীটি কিন্তু ভারী মজার উইলিয়ম হেনরি পার্কিন নামে ছিলেন এক রসায়নবিজ্ঞানী। রাতদিন নেই, শুধু গবেষণা আর গবেষণা!



পার্কিনের গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল কুইনিন। সে সময় কুইনিন তৈরি হতাে। সিঙ্কোনা গাছের ছাল থেকে। যেহেতু সিঙ্কোনা গাছ সব জায়গায় জন্মায় না, তাই অধিকাংশ দেশ কুইনিনের চাহিদা মেটাতে পারতাে না। ঐ কারণে সেদিন বহু রসায়নবিজ্ঞানী কৃত্রিমভাবে কুইনিনকে তৈরী করার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন। হেনরি পার্কিনও ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন।


পার্কিন লােকটি ছিলেন বেজায় সাদাসিধে। কিন্তু তাঁর স্ত্রী! একেবারে উল্টো। যেমন বদমেজাজী তেমনি খিটখিটে। ঘরের কোণে রাতদিন বসে কাউকে তিনি আদৌ বরদাস্ত করতেন না। সংসারের খুঁটিনাটি কাজকর্মটাকে বড় করে দেখতেন। যাকে বলে, একেবারে পাকা গৃহিণী।


পার্কিনের তাই ঘরে বসে থাকার জন্য মাঝে মাঝে গৃহিণী বেজায় বকাঝকা করতেন। কিন্তু পার্কিনের কানে ঢুকতাে না তাঁর কথা । চুপচাপ বসে থাকতেন, একটাও উত্তর দিতেন না। কিংবা গবেষণা করতে করতে এমন বাহ্যজ্ঞান শূন্য হয়ে পড়তেন যে, গৃহিণীর উপস্থিতিও টের পেতেন না যেন। ভদ্রমহিলা কী আর করেন! বেশ একচোট বকাঝকার পর দুমদাম করে পা ফেলে একসময় ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতেন।


একদিন হয়েছে কী! ভদ্রমহিলা কোন একটি কারণে রেগে একেবারে আগুনে হয়ে উঠলেন । রণরঙ্গিণী মূর্তিতে হাজির হলেন পার্কিনের সামনে। চিৎকার, চেঁচামেচি ও বকাঝকাতে যখন পার্কিন কিছুতেই মুখ তুললেন না, ভদ্রমহিলার যেন ধৈর্যচ্যুতি ঘটে গেল। পার্কিনের গবেষণাকে একেবারে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য টেবিলের উপর যত শিশি-বােতল ছিল, সবগুলিকে টেনে এনে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন মাটিতে। শিশি-বােতল ভাঙ্গার ঝন ঝন শব্দ এবং তার চেয়েও বিকট ভাঙ্গা কাঁসরের মত ভদ্রমহিলার গলার আওয়াজ কানে যেতে পার্কিনের যেন চৈতন্য হলাে। তিনি হাঁ হাঁ করে উঠে পড়লেন চেয়ার থেকে। কিন্তু যা হবার তাে হয়ে গেছে ততক্ষণে। গৃহিণী শিশি-বােতল ভেঙ্গে মনের আশ মিটিয়ে দুমদাম করে পা ফেলতে ফেলতে এবং গালিগালাজ করতে করতে চলে গেলেন। আর পার্কিন! মাথায় হাত দিয়ে মেঝেতে বসে হায় হায় করতে লাগলেন। 

টেবিলের সামনে দাড়িয়ে হা-হুতাশ না করা আর্ত করলেন গবেষণা। এবারের গবেষণা কুইনিন তৈরির জন্য নয়, সেই রঙটার জন্যই। খুল বেশী বেগ পেতে হলাে না তাঁকে। অল্পায়াসেই আবিষ্কার করে ফেললেন। “অ্যানিলিন মঙ" নামে পাকা নীল রঙ। মনের দুঃখ ভেসে গেল আনন্দের বন্যায়, অভিশাপ দেখা দিল


আশীর্বলিকাপে। পরে কুইনিনকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করার পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু আবির্তা পার্কিন নয়। পার্কিন ঐ নীল রঙ আবিষ্কার করেই অমর হয়ে আছেন এবং এই আবিষ্কারের মূলে আছে একমাত্র তাঁর কুদ্ধা গৃহিণীর অবদান।


Post a Comment

Previous Post Next Post