বলপেন (Ballpen)কি কোনো কিভাবে আবিষ্কার হলো।

 বলপেন


প্রথম বলপেন আবিষ্কার করেন একজন মার্কিন নাগরিক নাম জন লাউড। ১৮৯০ খ্রীস্টাব্দেই আবিষ্কার করেছিলেন। একটা কৈশিক নলের মুখটাকে সরু করে পরিয়ে দিয়েছিলেন বল বেয়ারিং । নলটাকে কালিতে ভর্তি করে কাগজের উপর চেপে লিখতে গেলে বলটা ঘুরতাে এবং কৈশিক আকর্ষণের ফলে ফাক দিয়ে কালি বেরিয়ে আসতাে কাগজে।


আসলে লাউড আবিষ্কৃত এই বলপেন দিয়ে ভালভাবে লেখা চলতাে না। একেবারে ভোঁতা যন্ত্র। বলপেনের ধ্যাবড়া কালিও তিনি তৈরি করতে পারেন নি। লিখতে গেলে মােটা ধ্যাবড়া ধ্যাবড়া অক্ষর হতাে, তরল কালিতে কাগজে জাবুড়া হয়ে উঠতাে, কালিও শুকিয়ে যেতাে না। মােটামুটি কাগজে লেখার সম্পূর্ণ অযােগ্যই ছিল। কাপড়, চামড়া ইত্যাদির উপর লিখতে সুবিধে হতাে বলে মাঝে মাঝে কেউ কেউ ব্যবহার করতেন।



লাউডের বলপেন কাগজে লেখার পক্ষে অযোেগ্য হলেও কারিগরি কৌশলটা।


কিন্তু তাঁরই আবিষ্কার। তবে আজকে আমরা যে সব ডটপেন বা বল পেন ব্যবহার করছি, তার আবিষ্কারক হাঙ্গেরীর দুই ভাই ল্যাজলাে বিরাে এবং জর্জ বিরাে। ল্যাজলো ছিলেন শিল্পী আর জর্জ ছিলেন একজন রসায়নবিদ। লাউডের পদ্ধতিটা ল্যাজলাের খুব মনে ধরেছিল। তাই ভাইকে বললেন বিশেষ ধরণের কালি তৈরি করতে, যা কৈশিক নলের ভেতরে বেশ গাঢ় হয়ে থাকবে এবং কৈশিক আকর্ষণে প্রয়োজন মত বেরিয়ে আসবে। আর শুকিয়েও যাবে সঙ্গে সঙ্গে।


উঠে পড়ে লেগে গেলেন দুই ভাই। ১৯৩৮ খ্রীষ্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তৈরি করে ফেললেন কাগজে লেখার উপযােগী বলপেন। পরিথিন দিয়ে তৈরি করলেন আরও সরু কৈশিক নল। মুখে লাগালেন ধাতুর তৈরি নিবের মত জিনিস এবং তার ভেতরে লাউডের তুলনায় অনেক অনেক ছােট বল। রাসায়নিক ছিলেন বলে জর্জ বিরাের তেমন ঘন ও আঠালো কালি তৈরি করতেও অসুবিধা হলােনা। দুভাই এবার ব্যবসা ফেঁদে বসলেন।



ইউরােপে যুদ্ধের তান্ডব যখন শুরু হলাে তখন দু-ভাই নির্বিঘ্নে যাতে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেন-তার জন্য চলে গেলেন আর্জেন্টিনায় এবং সেইখানেই লােকজন লাগিয়ে উৎপাদন করতে লাগলেন প্রচুর পরিমাণে ডট ও ডট পেন। এর সুবিধা লক্ষ্য করে একেবারে লুফে নিল সবাই। বিশেষ করে মার্কিন সৈন্যবাহিনী লেখা-জোখার কাজে কোন কিছুকে ব্যবহার না করে ঐ পেনকেই তুলে নিলেন। সুবিধা কত। কালি বহন করা ঝামেলা নেই, লিখতেও আরাম কালিও ঘন। কালি শেষ হয়ে গেলে আর একটা রিফিল তুলে নাও। দামটাও নামে মাত্র।


বল পেনের সুখ্যাতিতে এবার ভরে গেল দুনিয়া। সারা পৃথিবীতে শুরু হয়ে গেল ওর ব্যবহার। বর্তমানে ফাউন্টেন পেনের ব্যবহার সীমিত আর বলপেনের বাজার রমরমা। যতদিন যাচ্ছে, ততই ওর ব্যবহার বেড়ে চলেছে। এর থেকেও সুন্দর ও সহজে লেখার সরঞ্জাম আবিস্কৃত না হওয়া পর্যন্ত ওর বাজার মন্দা হবে না।

Post a Comment

Previous Post Next Post