ফাউন্টেন পেন
‘পেন ইংরেজী শব্দ । এসেছে ল্যাটিন 'পেন্না নামক শব্দটি থেকে। পেন্না অর্থে “পাখীর পালক”। সম্ভবতঃ কলম বা পেন হিসেবে দীর্ঘকাল পাখীর পালকের ব্যবহার অব্যাহত ছিল বলে অনুরূপ নামকরণ হয়েছে।
সভ্যতার একেবারে শুরুতে যেদিন মানুষ তার ভাবনা-চিন্তাগুলােকে লিপির মাধ্যমে ধরে রাখতে চেয়েছিল, সেইদিনই পরিকল্পনা করেছিল কলমের। প্রথম প্রথম এই কলম ছিল পাথরের সরু সরু ফলক, সরু করে ছটা গাছের ডাল, ইত্যাদি। তখনও অবশ্য কাগজ আবিষ্কৃত হয়নি। পাথরের উপর, মাটির ফলকের উপর, গাছের শক্ত ছালের উপর আঁচড় কেটে কেটে লিখতেন লিপিকাররা। চীনের পন্ডিতেরা আবার কচ্ছপের খােলের উপর লিখতেন।
প্রথম প্রাচীন মিশরই প্যাপিরাসের উপর লিখতে গিয়ে এক ধরণের কলম আবিষ্কার করেছিলেন। অনেকটা আজকের মত, ব্রোঞ্জের নিব তৈরি করে গুঁজে দিতেন বা বেঁধে দিতেন কোন একটা সরু ও ছােট গাছের ডালের সঙ্গে। মধ্যযুগে
কাগজ আবিত হলেই পাখীর পালককে কলম হিসেবে ব্যবহারের সূচনা হয়। ১৭৮০ খ্রীষ্টাব্দেই সম্ভবতঃ প্রকৃত কলমের আবির্ভাব ঘটে। এই সময় কলমের উগায় লাগানাে হয় ইস্পাতের বা পেতলের নিব।
নিব লমকে দোয়াতের কালিতে ডুবিয়ে ডুবিয়ে লিখতে হতাে। মাঝে মাঝে অসুবিধাও হতাে। কাগজে কালি পড়ে যেতাে, লেখা মােটা-সরু হতাে, হাতে কালি লেগে যেতাে, ইত্যাদি। এই অসুবিধাগুলােকে দূর করতেই ফাউন্টেনপেনের পরিকল্পনা। যদিও বিংশ শতাব্দীর প্রায় মধ্যভাগ পর্যন্ত নিব-কলমের ব্যবহার ব্যাপক ছিল। এখনও যে আদৌ চোখে পড়ে না এমন নয়।
ফাউন্টেন পেন আবিষ্কৃত হয়েছে ১৮৮০ খ্রীস্টাব্দে। আবিষ্কারক এল.ই.ওয়াটারম্যান নামে জনৈক মার্কিন প্রযুক্তিবিদ। সেদিন ঐ ফাউন্টেন পেনের নিবটা তৈরি হতাে চল্লিশ ক্যারেটের সােনা দিয়ে এবং নিবের ডগায় এটে দেওয়া হতাে ইরিডিয়ামের ছােট একটা বলের মত। এর দাম প্রচুর ছিল বলে সাধারণে ব্যবহার করতে পারতেন না। সেই অল্প দামের নিব-কলমটা চলে আসছিল। পরের দিকে সস্তায় ফাউন্টেন পেন তৈরির প্রচেষ্টা চলে। এবং সস্তায় ফাউন্টেন পেন উৎপাদন করে জাপান। তারপর থেকে প্লাস্টিক শিল্পের উন্নতি হলে পেনে পেনে বাজার ছেয়ে যায়। ফাউন্টেন পেনের অসুবিধাগুলাে দূর করতে বলপেনের পরিকল্পনা।