ব্যারোমিটার।
এক ভদ্রলােক খুব গভীর একটা কূপ খননের জন্য কিছু লােককে নিয়ােগ। করেছেন। লোকগুলো
মাটি খুঁড়ে আর চুইয়ে আসা পানি পাম্প বসিয়ে উপরে বার করে দিতাে। তারপর আবার
খুড়তাে। কয়েকদিন খোড়ার পরে ভয়ানক অসুবিধায় পড়লে খননকারী। আবার পাম্প ঠেকিয়ে
তলা থেকে একটু পানি বাহিরে আনা গেল না। লোকগুলো সুবিধার কথা জানাতে ভদ্রলােক
কারণটা সম্বন্ধে খুব করে ভাবলেন, দু-দশ জনকে জিজ্ঞাসা করলেন, কিন্তু ব্যাপারটা আদৌ
ধরতে পারলেন না।
ভদ্রলোক তখন অনেক ভেবে-চিন্তে একদিন হাজির হলেন তখনকার সেরা।
বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর কাছে। গ্যালিলিও তখন অতি বৃদ্ধ। তার উপর অন্ধ হয়ে পড়েছেন
এবং কোন কিছুকে নিয়ে ভালো ভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা হারিয়েছেন। তাই প্রিয় শিষ্য
টরিসেলিকেই কারণটা অনুসন্ধানের জন্য ভার দিলেন।
গুরুর কথানুযায়ী টরিসেলি কূপ
দেখলেন, নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালালেন, শেষে দড়িতে পাথরের টুকরা বেঁধে এবং
সেটিকে কূপের ভেতরে নামিয়ে দেখলাম, কূপের গভীরতা চৌত্রিশ ফুটের চেয়ে কিছু বেশি।
টরিসেলি দেখেশুনে খুব বিস্ময়বােধ করলেন। বারে বারে একই প্রশ্ন তাঁর মনে এলে, কেন
চৌত্রিশ ফুটের বেশি গভীরতা থেকে পাম্প দিয়ে পানি তােলা। যাচ্ছে না? কোথায় রয়েছে
এর প্রতিবন্ধক?
একসময় তাঁর মনে এলাে, এই ব্যাপারটার মূলে হয়ত বায়ুর চাপের কোন
ক্রিয়া আছে। তা না হলে পানি কেন উপরে উঠবেনা? অপরদিকে চৌত্রিশ ফুট গভীরতা পর্যন্ত
পানি তুলতে কোন অসুবিধা তাে হচ্ছে না। কিন্তু কেমন করে হদিশ পাওয়া যাবে!
অনেক
ভেবেচিন্তে টরিসেলি এক মিটার লম্বা এবং এক মুখ খোলা কাচনল । নিলেন। নলটিকে ভর্তি
করলেন পানির চেয়ে প্রায় সাড়ে তেরগুণ ভারী তরল পারদ দিয়ে। তারপর নলটিকে একটি
পিরপূর্ণ পাত্রে উপুড় করে খাড়াভাবে ধরে রাখলেন ।
আশ্চর্য হলেন টরিসেলি । নলের ভেতরের
পারদটা ভর্তি হয়ে থাকলাে না বা সম্পূর্ণভাবে নেমে পড়ে না। ধীরে ধীরে নেমে আসতে
আসতে ছিয়াত্তর সেন্টিমিটার উচ্চতায় একেবারে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল।টরিসেলি
এবার বুঝতে পারলেন, বায়ুমন্ডল পৃথিবীর উপর যে চাপটা প্রদান। করছে, সেই চাপ
ছিয়াত্তর সেন্টিমিটার পারদ স্তম্ভের ধরে রাখতে পারে। যেহেতু পানির চেয়ে পারদ
১৩.৬ গুণ ভারী, তাই ১৩.৬X৭৬ সেন্টিমিটার বা ৩৪ ফুট উচ্চ পানিস্তম্ভকে যে ধরে রাখতে
সক্ষম। আর ঐ কারণেই সাধারণ পাম্প ৩৪ ফুটের মধ্যে কাজ করতে সক্ষম।
এই ঘটনাকে
কেন্দ্র করে টরিসেলির মন বায়ুর চাপ সব সময় সমান থাকে। কিনা, কিংবা পৃথিবীর
বিভিন্ন স্থানে ঐ চাপ কেমন, পাহাড়ের উপর কিংবা খনিগর্ভে চাপের তারতম্য ঘটে কিনা,
ইত্যাদি জানার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেন। এবং তখনই তৈরি করেন চাপমান যন্ত্র বা
ব্যারোমিটার । এই যন্ত্রের প্রধান উপকরণ হচ্ছে সেই পারদ পাত্র এবং তার উপর উপুড়
করে রাখা পারদ ভর্তি এক মিটার লম্বা একটা সরু কাচের নল। ওটিকে যাতে সহজে বন্ধ করা
যায় বা স্থির ভাবে রেখে দেওয়া যায়, তার জন্য যান্ত্রিক কতকগুলাে ব্যবস্থা থাকে
মাত্র।
